হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসে ওয়াল্টার লুইন

বসে আছি The Hogwarts Express এর তিন নাম্বার বগিতে। গন্তব্য MIT হয়ে Hogwarts School of Witchcraft and Wizardry. ট্রেন ছাড়তে সময় বাকি আরো মিনিট পনেরো। 9 ¾ নাম্বার প্লাটফর্ম লোকে লোকারণ্য। চলছে কুলিদের হাঁকডাক। শোনা যাচ্ছে, আপনজনদের বিদায়ের বন্দনা। আমার সামনের সীটের যাত্রী এখনো এসে পৌছেনি। একা বসে বসে ইয়ারফোনে শুনছি, সৌমিত্রদার কণ্ঠে রবিবাবুর কবিতার আবৃতি, "রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা"। যখন চলছে "রাতের সব তাঁরাই আছে, দিনের আলোর গভীরে", তখন এক বয়োবৃদ্ধের প্রবেশ। মাথায় চিঁড়ুনীর আচর বিহীন চুল। আর, বুকপকেটে একটা 'মামলেট করা ডিমে'র স্টিকার। বার তিনেক হুইসেল বাজিয়ে ছেড়ে দেয় ট্রেন। ধীর গতির দোলাচলে শুরু হয় আমাদের আলাপ। জানতে পারি, সহযাত্রী MIT'র বিখ্যাত ফিজিক্সের প্রফেসর, প্রফেসর ওয়াল্টার লুইন। যার কাছে ফিজিক্সের পাঠ নিলে প্রকৃতিকে না ভালোবেসে আর পারা যায়না। প্রফেসরের গন্তব্য Hogwarts School of Witchcraft and Wizardry. ওখানের যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপহার দেন স্বভাবসুলভ সেই বিখ্যাত মুচকি হাসি। চলতে চলতে ট্রেন যখন সবার পছন্দের সেই ব্রিজের উপর, যেখান থেকে একপাশে তাকালে অজস্র পাহাড়রাশী আর সেখান থেকে ছুটে আসা ঝরণা আর অন্যপাশে বহুদুরে পর্বত শেষ হয়ে সমুদ্রে মিশে যাওয়া দেখা যায়। চোখে পরে এক রামধনু। এ যেনো একটু অন্যরকম কোথায় যেনো এর খানিক আলাদা। ধরতে পারছিলাম না। প্রফেসরের কাছে জানতে চাইলে উনিও কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়ে যান। আরেকটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারি, এর ব্যান্ড সিকুয়েল একদম ভিন্ন ত বটেই সাথে নূতন কিছু রেখাও দেখা যাচ্ছে। প্রফেসরকে দেখে একটু মায়া হচ্ছে ঠিক, তবুও ঠাট্টা করার সুযোগটা হারানো উচিত হবে কিনা, বুঝতে পারছিলাম না। বিখ্যাত মানুষদের বিব্রত করতে অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায়। তাদের ভরকে যাওয়া চেহারা দেখতে বেশ লাগে। বললাম, 'প্রফেসর লুইন! রেইনবো লেকচারেতো বলেছিলেন এরকম হওয়ার সম্ভাবনা এই মহাবিশ্বে নেই। এখন কিন্তু সব ভিন্নই দেখা যাচ্ছে।' বলেই মুচকি মুচকি হাসছি। তবুও উনি নিজেকে নানানভাবে ডিফেন্স করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ততক্ষণে বাইরের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। নানান আকারের নানা প্রকারের রামধনুতে ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক। সবদিকে ছড়িয়ে পড়ছে রেইনবো ক্যান্ডি। হারিয়ে যাচ্ছে সব। ক্রমেই সাদাকালো হয়ে যায় জগত। মনে হয় যেনো, এ জগতে রঙ নেই, মায়া নেই, শব্দ নেই। অনুভুতিহীন এক জগত।।

এরপর?
এরপর ঘুম থেকে জেগে উঠে অলীক স্বপ্নজগতের কথা চিন্তা করে মুচকি হাসা।
-----------
সত্য স্বপ্ন অবলম্বনে লিখা। ভোরের স্বপ্ন নাকি মিথ্যে হয়না কিন্তু এপিজে সাহেব বলে গেছেন, ঘুমিয়ে দেখাটা কোনো স্বপ্নই না। সে যাইহোক, সব স্বপ্ন সত্যই হতে হবে এমন ত কথা নেই আর এরকম তৃপ্তির স্বপ্ন দেখতেও ত আনন্দ।
সবার স্বপ্নরাজ্য অন্তত স্বপ্নের মতো সুন্দর হোক। Keep dreaming, stay happy. happy dreaming.

১৪ই অগাস্ট, ২০১৮

No comments:

Powered by Blogger.